শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

উদ্বোধন হলো বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেতু : আনন্দে উচ্ছাসিত পিরোজপুরবাসী

উদ্বোধন হলো বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেতু : আনন্দে উচ্ছাসিত পিরোজপুরবাসী

0 Shares

ইন্দুরকানী বার্তা :
পিরোজপুরের কঁচা নদীর উপর বেকুটিয়া পয়েন্টে নির্মিত ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতুর উদ্ভোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর উদ্বোধনের পরে সেতুর উপরে উচ্ছাসিত জনগন বাদ্যযন্ত্র ও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে ।

এখন থেকে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার মানুষ স্বল্প সময়ে এবং সহজেই খুলনা, মংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সাথে সড়কপথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলাচল করতে পারবে। এই সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং সাগরকণ্যা কুয়াকাটা থেকে বরিশাল-পিরোজপুর হয়ে খুলনা সড়কপথে ফেরি যুগের অবসান ঘটছে। সেই সঙ্গে এই রুট হয়ে বরিশাল- খুলনার দূরত্ব কমেছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। রবিবার বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পিরোজপুর সদরের কঁচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সবসময় অবহেলিত। তাই তাদের অবস্থার উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করেছি। পদ্মা সেতুসহ দক্ষিণাঞ্চলে অনেক সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।’‘কঁচা নদীতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগে আর কোনো বাধা থাকছে না। এ সময় হাস্যোজ্জল মুখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিরোজপুরে প্রচুর পেয়ারা ও আমড়া হয়। আমরা এখন থেকে ঢাকা বসেই খুব দ্রুত এই জেলার তাজা মজার পেয়ারা খেতে পারবো।’ শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছোট বেলায় স্টীমারে চড়ে গোপালগঞ্জ যাবার পথে কাউখালীতে স্টীমার ভিড়তো। তখন ফেরিওয়ালারা স্থানীয় শীতল পাটি নিয়ে স্টীমারে উঠত। এখনও সেই শীতল পাটি কাউকালীতে পাওয়া যায় কিনা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলের এক ইঞ্চি জমিও যেনও অনাবাদি না থাকে। সারাদেশের মানুষকে পানি, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। সারা বিশ্বে মন্দা দেখা দিয়েছে, আমাদের আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে উৎপাদনমুখী হতে হবে। আমরা লবণাক্ত জমিতে ধান রোপণের জাতও উদ্ভাবন করেছি। আমরা আমাদের খাবার নিজেরাই উৎপাদন করবো।’

এদিকে সেতু উদ্বোধনের লক্ষ্যে পিরোজপুরে সেতুর দুই প্রান্ত কুমিরমারা ও বেকুটিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।

পিরোজপুর প্রান্তের অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ.ম রেজাউল করিম, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার আমিনুল ইসলাম, সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামীম আক্তার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ জাহেদুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ সাঈদুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল, আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এমএ হাকিম হাওলাদার, পিরোজপুরের পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, বরিশাল ডিজিএফআইর জিএস কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম, বরিশাল সড়ক বিভাগ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ, সড়ক বিভাগের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল আউয়াল মোল্লা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী রেবেকা খান, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সবানেত্রী অধ্যাপিকা লায়লা পারভীন, ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্র সেতুর ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার (চায়না) মিস্টার ওয়েনচানমিং উপস্থিত ছিলেন। এসময় পিরোজপুর প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী তাসলীমা জেরিন ও দশম শ্রেনীর ছাত্র আতিফ মোস্তফার সঙ্গে কথা বলেন প্রধাণমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে এসময় উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন।

অণ্যদিকে কাউখালী উপজেলা প্রান্তে ছিলেন পিরোজপুর -২ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মাত খালেদা খাতুন রেখা, পুলিশ সুপারে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না, সড়ক, সেতু ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ শামিমুজ্জামান, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইদ মিয়া মুন, ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মিরাজুল ইসলাম, ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ.কে.এম আব্দুস শহিদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান তালুকাদর পল্টনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি এবং আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী এসময় সেতুর উপকারভোগী ভাসমান ব্যবসায়ী সোলায়মান হোসেন ও ক্ষুদ্র চায়ের দোকানী শিপ্রা কুন্ডুর সঙ্গেও কথা বলেন।
দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী কঁচা। বর্তমান সরকার ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর এ নদীর কাউখালীর বেকুটিয়া প্রান্তে ও সদর উপজেলার কুমিরমারা প্রান্তে শুরু করে ৮ম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু নির্মান কাজ উদ্বোধন করেন। ৮ শত ৯ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯৯৮ মিটার দীর্ঘ ও ১৩.৪০মিটার প্রস্থের সেতুতে ১০টি পিয়ার ও ৯টি স্প্যান রয়েছে। ৮৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীন সরকার এবং বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের। ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্টসহ দুই লেনের সৈতুটির দৈর্ঘ্য ১৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার।





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap